কোনো একসময় নিসর্গের নিঃশব্দ প্রাঙ্গণে
যখন বাতাসের নীরব লাফ ভাঙবে—
অকস্মাৎ বেজে উঠবে আমার বিদায়ের শঙ্খধ্বনি, অথচ অন্তরতম কম্পনে ভেঙে দেবে
পৃথিবীর সকল অলীক নিশ্চুপতা।
আমি তখন স্মরণ করব—
শিশিরকণার অশ্রুতে লেখা ভোরের পত্রিকা,
প্রথম কিরণের কাছে দোলা দেওয়া ঘাসের কাঁপুনি,
জলভেজা মাটির আদিম ঘ্রাণে জমে থাকা
অতীতের সব অমৃত শোকের ছায়া।
ধূসর মেঘে ঢাকা নৈঃশব্দ্য আকাশ,
যেখানে বাতাসের ছোঁয়ায় জন্ম নেয় অব্যক্ত বেদনা,
আর সন্ধ্যার গোধূলিতে মিলিত হয়
আলো ও আঁধারের অসীম শোকগাথা,
যেখানে প্রতিটি ছায়া যেন নিজের সঙ্গীত খুঁজে নেয়।
আমার প্রতিটি নিশ্বাসে ফিরে আসবে
ভাঙা কবিতার পঙক্তি,
অসমাপ্ত চিঠির নীরব আর্তনাদ,
প্রিয়জনের কণ্ঠে লুকানো অব্যক্ত কান্না,
যা সময়ের আড়ালে অনন্তকাল ধরে জমে থাকে।
বাতাস তখন এসে ছিঁড়ে নেবে আমার ছায়া,
তার প্রতিটি দমকা হাওয়ায় বেজে উঠবে
আমার অন্তিম নিঃশ্বাসের মর্মর ধ্বনি,
যা আকাশকে শূন্য করে দেবে,
পৃথিবীর হৃদয়কে জাগ্রত করবে অদৃশ্য কান্নায়।
আমি চলে যাবো, তবুও রেখে যাব—
গোধূলির আবছা আঁধারে জমে থাকা রক্তিম স্মৃতি,
অর্ধেক হাসি, অর্ধেক বেদনা,
আর অন্তহীন বিরহের দগ্ধ অগ্নিশিখা,
যা অচেতন মনেও চুম্বকের মতো টান নেবে।
যাঁরা কাঁদবে—
তাদের অশ্রুর প্রতিটি বিন্দু হয়ে উঠবে
একেকটি ভাঙা সেতারের তন্ত্রী,
যার সুরে ধ্বনিত হবে আমার অস্তিত্বের শবসঙ্গীত,
অন্তরাত্মার নীরবতাকে ছিঁড়ে,
এক নতুন নীরবতার জোয়ারে মিলিয়ে যাবে।