সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জনবৈচিত্র্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের বন্ধনের জেলা বান্দরবান। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বান্দরবান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং পর্যটন শিল্প বিকাশের অসীম সম্ভাবনা নিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত। সদর দপ্তর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়ন শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৬ ইস্ট বেঙ্গলের অধীনে রুমা উপজেলার সুংসুং পাড়া সাবজোনের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা মূলত প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই অঞ্চলের মানুষ। ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বন্ধু হিসেবে যেকোনো দুর্যোগে পাশে থেকেছে। বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের বসবাস, যার মধ্যে বম সম্প্রদায় অন্যতম প্রধান জনগোষ্ঠী।
আজ ১৫ই মার্চ ২০২৫ সুংসুং পাড়া সাবজোনের অন্তর্গত অত্যন্ত দুর্গম এলাকা থাইক্ষ্যং পাড়ায় অধিনায়ক ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের নেতৃত্বে সারাদিনব্যাপী মানবিক সহায়তা প্রদান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্নেল সরদার জুলকার নাঈন, বিএসপি, পিএসসি, অধিনায়ক দি ম্যাজেস্টিক টাইগার্স। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুংসুং পাড়া সাবজোনের ক্যাম্প অধিনায়ক, মেজর মুহাম্মদ আরাফাত রোকনী, ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের রেজিমেন্টাল মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন সালমান মেহেদী অংকন, বম পাড়ার কারবারিবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মযাজক, শিক্ষক ও পাড়ার সদস্যগণসহ সর্বমোট ২০০ জন জন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথি বলেন এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু যার মধ্যে রয়েছে জিংসিয়াম সাইতার ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, ডাবল ফলস, কেওক্রাডং পাহাড়, ত্রিদেশীয় সীমানা ফলক সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো পাড়াবাসীর অন্যতম প্রধান জীবিকা নির্বাহের উৎস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং জনগণ পাড়ায় ফেরত এলে পর্যটন শিল্পের পুনর্বিকাশের মাধ্যমে সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারবে।
প্রধান অতিথি পাড়ায় অনুপস্থিত বম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং ফেরত আসা জনগোষ্ঠীর চাকুরীর ব্যবস্থা, আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় খাবারের রসদ সরবরাহ ইত্যাদি ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষাই একমাত্র মানদন্ড। পাড়ার সন্তান এবং যুবসমাজের মান-সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সকল প্রকার প্রয়োজনে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাশে থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের ভূমিকা, এলাকায় সন্ত্রাস দমন এবং পর্যটক আসা সাপেক্ষে টুরিস্ট গাইড এর ব্যবহার এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সহায়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এছাড়াও জনউন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে থাইক্ষ্যং পাড়ায় ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের রেজিমেন্টাল মেডিকেল অফিসার, ক্যাপ্টেন সালমান মেহেদী অংকন এর তত্ত্বাবধানে সারাদিনব্যাপী একটি বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পেইনে সর্বমোট ১২৭ জন বম জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন যার মধ্যে ছিলেন ৬৫ জন নারী, ৩৫ জন পুরুষ এবং ২৭ জন শিশু।
মতবিনিময় সভার শুরুতে অধিনায়ক দি ম্যাজেস্টিক টাইগার্স কারবারীদের মাঝে সম্মাননা প্রদান করেন এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে সম্পূর্ণ পারায় ২০০ অধিক জনবলের এক বেলার উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয় । এছাড়াও থাইক্ষ্যং পাড়া বাসি ৪০ জন দুস্থ বম সম্প্রদায়ের জনগনের মাঝে জনকল্যাণকর কাজের অংশ হিসেবে খাদ্য সামগ্রী (জনপ্রতি: চাল- ৫ কেজি, চিনি- ২ কেজি, ডাল- ২ কেজি, লবন- ২ কেজি এবং তেল- ২.৫ লিটার) ।
উক্ত মতবিনিময় সভায় থাইক্ষ্যং পাড়া নিবাসী হামলন বম পানির সমস্যা নিরসনে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ফিট পানির পাইপ এবং খাদ্যরশদ প্রাপ্তির জন্য সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও আজ সারাদিনব্যাপী চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, উন্নত মানের খাবার পরিবেশন এবং খাবার সামগ্রী বিতরণের জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা বৃদ্ধির মনোভাব প্রকাশ করেন।
সভা চলাকালীন সময়ে দার্জিলিং পাড়া এবং পাসিং পাড়া কারবারী তাদের পাড়ায় পানির রিজার্ভয়ের স্থাপনের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেন। সভায় উপস্থিত এমটিএস পাড়া প্রতিনিধি এবং রোমানা পাড়া স্কুলশিক্ষক তাদের নিজস্ব এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন করার জন্য অধিনায়ককে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য যে মতবিনিময় সভার শেষসময়ে, ধোপানিছড়া নিবাসী কর্ন লিয়া ত্রিপুরা, বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টে দ্বিতীয় বর্ষের অধ্যয়নরত উপস্থিত হয়ে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির জন্য করেন আবেদন করেন এবং তৎক্ষণাৎ অধিনায়ক উক্ত শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান করেন এবং প্রতিমাসে সুংসুং পাড়া আর্মি ক্যাম্প হতে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্ত্রাসবাদ এবং রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকল মানুষের দুর্যোগকালীন সময় এবং ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সর্বদা সাহায্য করে আসছে। অধিনায়ক আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সবসময় পাশে থেকে কাজ করে যাবে।