নারায়ণ সরকার (নয়ন) হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বালির নিচে লুকিয়ে রাখার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত স্বামী রাজন মিয়া আদালতে স্বেচ্ছায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯নং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের করড়রা গ্রামে রাজন মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী শাপলা বেগমের (২৭) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। শাপলা স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গত ৩ নভেম্বর (সোমবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজন মিয়া তার স্ত্রীকে এক পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান বলে অভিযোগ। এসময় প্রেমিক পালিয়ে গেলে রাজন ক্ষিপ্ত হয়ে শাপলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু স্ত্রী প্রেমিকের নাম প্রকাশ না করায় উত্তেজিত হয়ে রাজন উড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন। এরপর মরদেহ ঘরের পাশে থাকা বালুর স্তূপে পুঁতে রাখেন।
পরদিন (৪ নভেম্বর) সকালে রাজন হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালত মাধবপুর থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিকেলে মাধবপুর থানা পুলিশ রাজনকে সঙ্গে নিয়ে করড়রা গ্রামের বালুর স্তূপের নিচ থেকে নিহত শাপলার মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত শাপলা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা গ্রামের সুমন মিয়ার মেয়ে। তিনি স্বামীর সঙ্গে করড়রা গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, “শাপলাকে খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে তার পাষণ্ড স্বামী রাজন। এমন নৃশংস কাজ করবে কখনো ভাবিনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া হতো। কিন্তু হত্যার পর মরদেহ বালুর নিচে লুকানোর মতো ঘটনা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।”
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আতাউল মোস্তফা সুহেল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে এলাকায় বসবাস করছিলেন। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক।”
মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহিদ উল্ল্যা বলেন, “আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাজনকে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরকীয়া সন্দেহ ও পারিবারিক কলহের জেরেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত রাজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।