--------
মোঃ তৌহিদুল ইসলাম
জামালপুরের বকশীগঞ্জে একাত্তর টিভির সাবেক উপজেলা সংবাদদাতা ও বাংলা নিউজ ডটকমের সাবেক প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার দুই বছর পার হলেও বিচার কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
পরিবারের অভিযোগ— প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করার অপচেষ্টা চলছে, ফলে মামলাটি ধীরে ধীরে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার মতোই বিলম্বিত হচ্ছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বকশীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিমের বাড়িতে সরেজমিন পরিদর্শন করেন সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মো. খায়রুল আলম রফিক ও তার টিম। এ সময় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করেন, “আমার স্বামী হত্যায় ২২ জনের সম্পৃক্ততা থাকলেও চার্জশিটে মাত্র ৯ জনের নাম এসেছে। এতে মূল আসামিরা আড়ালে রয়ে গেছে, যা আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন একেবারে অসহায়। সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতায় টিকে আছি। আমি আমার স্বামী হত্যার প্রকৃত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রফিক বলেন, “১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ মামলারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এ কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার সাহস পেয়েছে অপরাধীরা।”
তিনি বলেন, “নাদিম হত্যাকাণ্ডটি একটি পরিকল্পিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। হত্যাকারীরা সবাই পেশাদার কিলার। মামলার তদন্তে বারবার নাটকীয়তা সৃষ্টি করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। যেন এটি সাগর-রুনি মামলার মতো অনন্ত বিলম্বের শিকার না হয়।”
রফিক আরও জানান, মামলার অগ্রগতি তদারকির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও সেলের সহকারী পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ আলী আবির। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সেলের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান (অনুসন্ধান) মো. আব্দুল মান্নান, বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু এবং একজন মানবাধিকার কর্মী।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন সেলের পরিচালক (জেলা ইউনিট প্রধান) রেজাউল করিম রেজা, সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান রুবেল, সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) আবুল কাশেম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সেলিম সরকার, বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উল হাসান, সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন, আল মোজাহিদ বাবু, মনিরুজ্জামান লিমন, রকিবুল হাসান বিদ্রোহীসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এ সময় নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজখবর নেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন। তারা নাদিমের কবর জিয়ারত করেন ও থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে মামলার অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
নাদিমের পরিবারের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আয়-রোজগারের কেউ না থাকায় তার স্ত্রী ও সন্তানরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সাংবাদিক নেতারা তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সবশেষে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ সেল বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন। এসময় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানান।