----------
আলীকদম সংবাদদাতা
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের মংচাপাড়া (মুসলিম পাড়া) এলাকার নাসিমা আক্তার নামে এক নারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, নাসিমা আক্তার প্রথমে ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পরবর্তীতে চারজন নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন তিনি।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আলীকদমে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে বলেন, “মামলার কারণে আমরা আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। আদালতে যাতায়াতে প্রচুর খরচ হচ্ছে। অথচ মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
স্থানীয় লোকজন জানান, নাসিমা আক্তার ও তার খালাতো ভাইসহ একটি প্রতারক সিন্ডিকেট গঠন করে এলাকার সহজ-সরল যুবকদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে আসছে। টাকা না দিলে নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর রাতে আলীকদম পানবাজারের জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের দ্বিতীয় তলায় এক যুবকের সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় নাসিমা আক্তারকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। পরের দিন বৃহস্পতিবার অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অপরাধে তাদের কে বান্দরবান জেলা সদরের একটি আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।  এদিকে গত ১৯ মার্চ আলীকদম থানায় একটি মিথ্যা নারী ধর্ষণ মামলা রুজু হলে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন আসামীকে আটক করে পুলিশ, তারা হলেন আবদুল করিম (১৯), মো. রাসেল (২১), আবদুল মবিন (২০) ও ইকবাল হোসেন (২৪)।  মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ভুক্তভোগী পরিবারের বুলবুল আক্তার, রহিমা আক্তার, মালেখা বেগম, ইকবাল হোসেনের বউ শাহিদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে তার খালাতো ভাইরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। আমরা টাকা দিতে না পারার কারণে ২ দিন পরে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে গত ১৯ মার্চ মাতামুহুরী নদীতে গোসল করে বাড়িতে আসার সময় ইভটিজিং ও পরে মুখ চেপে ধরে তামাক ক্ষেতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করেছে মর্মে থানায় অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ তাদের কে আটক করে আদালতে সোর্পদ করে। পরে আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করে। আমরা এমন মিথ্যা মামলা থেকে আমাদের ছেলেদের মুক্তি দাবি করছি।  তারা আরও বলেন, এ মংচাপাড়া এলাকা তথা আলীকদম উপজেলার সবাই দেখেছে এবং জানতে পেরেছে নাসিমা নামের মেয়েটি আলীকদম পানবাজার জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজে পরকিয়া/দেহ ব্যবসা করতে গিয়ে স্থানীয় জনতা আটক করে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এমন অসামাজিক কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। তবে মিথ্যা ঘটনাকে পুঁজি করেই পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।  মংচাপাড়া মুসলিম পাড়া এলাকার সাবেক সর্দার মোঃ এমদাদত হোসেন ও স্থানীয় ব্যক্তি মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, গত ৮/৯ মাস আগে নাসিমা আক্তার নামের একজন মেয়ে এলাকার (৪ জন) অসহায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের নামে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যাদের বিরুদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে তাদের পরিবারে লোক জনের কাছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ার কারণে এক দিন পর মিথ্যা মামলা দায়ের করে আলীকদম থানায়।
তারা আরও বলেন, শুধু এ ৪জন নয়, এলাকায় আরও অনেক যুবক ছেলেদের জীবন নষ্ট করেছে এ মেয়েটি। গত বৃহস্পতিবার রাতে নাসিমা আক্তার পানবাজার রেস্ট হাউজে অবৈধ মেলামেশা করা সময় তাদের কে আটক করে পুলিশ। আমরা নিরহ ৪ জন ছেলের মিথ্যা ধর্ষণ মামলা থেকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।  আরেক ভুক্তভোগীর স্ত্রী শাহিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী দিন মজুর করে আমাদের সংসার চালায়। এখন আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে, ছেলে- মেয়েদের পড়ালেখা করতে পারছে না। এমন মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামীর মুক্তি চাই। মামলা দিয়ে আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। নাসিমা আক্তারের দায়ের করা এই মিথ্যা মামলার অত্যাচার থেকে আমরা বাঁচতে চাই।  অভিযুক্ত নাসিমা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি, তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।  
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন বলেন, পানবাজার রেস্ট হাউজে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে নাসিমাসহ এক ছেলেকে আটক করা হয়। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।