মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার—শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, বস্ত্র ও খাদ্য। এর মধ্যে চিকিৎসা সেবা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিকার, যা জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু আজ প্রশ্ন জাগে—এই মৌলিক অধিকারগুলো আমরা কি যথাযথভাবে পাচ্ছি?
বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাসস্থান, এমনকি খাদ্য ও বস্ত্র—সব কিছুর মূল্যস্ফীতি আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আজ অসহায়। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্ভোগের এক অব্যক্ত চিত্র। তাহলে প্রশ্ন আসে—এই ভোগান্তির শেষ কবে?
আলীকদম উপজেলার বাস্তব চিত্র:
চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা আলীকদম। আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ৪৯,৩১৭ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। এত বড় একটি উপজেলায় রয়েছে মাত্র একটি সরকারি হাসপাতাল। পাশাপাশি আছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র/ক্লিনিক এবং ৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক। তবে পরিসংখ্যান থাকলেও, বাস্তব সেবার অভাব প্রকট।
সমস্যা কোথায়?
ডাক্তার সংকট—বিশেষ করে নারী ও পুরুষ ডাক্তার দুজনেরই যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অভাব—যার ফলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না।
পর্যাপ্ত পরিস্কার-কর্মী, নার্স ও সাপোর্টিং স্টাফ নেই।
অনেক সময় রোগীদের পাঠানো হয় দূরবর্তী শহরের হাসপাতালে—যা অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে কষ্টসাধ্য।
ফলে আলীকদমের সাধারণ মানুষ এক ধরনের 'স্বাস্থ্য অন্ধকারে' বাস করছেন।
তাহলে সমাধান কোথায়?
প্রথমত, এই সংকটের দায় শুধুই স্থানীয় পর্যায়ের নয়, এটি একটি নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যর্থতা। যখন দেশের সংবিধানেই বলা আছে, স্বাস্থ্যসেবা নাগরিকের অধিকার, তখন সেই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
কিছু প্রস্তাবনামূলক সমাধান:
আলীকদম উপজেলায় আরও সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন।
নতুন ডাক্তার নিয়োগ ও চিকিৎসকদের স্থায়ীভাবে পোস্টিং দেওয়া।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কার্যকর করে তোলা।
স্থানীয় মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ চালু করা।
উপসংহার:
একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয় তখনই, যখন তার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি অধিকার। আলীকদমের মানুষ আজও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত—এটা শুধু লজ্জাজনকই নয়, বরং উদ্বেগজনকও। এখন সময় এসেছে—প্রশ্ন নয়, সমাধান চাওয়ার। এবং তার বাস্তবায়ন দেখতে চাওয়ার।