-----
মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় প্রতিপক্ষ কর্তৃক এক মাদ্রাসা শিক্ষকের দোকানঘর ভাংচুর ও লুটপাটের আভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা শাহ আলমরা এ লুটপাট ও ভাংচুর চালায় বলে অভিযোগ শিক্ষক হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের। ঘটনার সময় প্রতিপক্ষ শাহ আলমরা দোকান থেকে ৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। একই সময় দোকানের বেড়া ও জিনিসপত্র ভাংচুর করে আরো ১ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন। রবিবার দুপুরে শিক্ষক হাফেজ মো. খলিলুর রহমান (৫০) সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ তুলে ধরেন। লুটপাটের ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে হাফেজ মো. খলিলুর রহমান গত ১৬ আগস্ট বিকেলে চকরিয়া থানায় প্রতিপক্ষ শাহ আলম (৫৫)সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেন। এতে অন্য অভিযুক্তরা হলেন- পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা শাহ আলমের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৫০), ছেলে মোহাম্মদ রুবেলে (৩০) ও আনোয়ার হোছন (৩২), সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সোহাগী আক্তার (২৬), মোহাম্মদ রুবেলের স্ত্রী সুমি আক্তার (২৫) ও মো. রফিকের স্ত্রী জুলি আক্তার (২০)। হাফেজ মো. খলিলুরে রহমান লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সিনিয়র মৌলভী।
অভিযোগে জানা যায়, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ায় বি.এস খতিয়ান নং ১১৭, সৃজিত বি.এস খতিয়ান নং ৮০২, সৃজিত বি.এস দাগ নং ৩২৫ মূলে হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের ৭ শতক জায়গা রয়েছে। এ জায়গার কিছু অংশে দোকান ও অবশিষ্ট অংশে চাষাবাদ করে ভোগ করছেন। সম্প্রতি এ জায়গার উপর পাশের শাহ আলমদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা এ জমি জবর করতে বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালায়। এর অংশ হিসেবে শাহ আলমরা গত বছর চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে রিভিউ মিচ মামলা ৬৭/২০২৩-২৪ দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা (কানুনগো) সরেজমিনে তদন্ত করে গত বছরের ৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) চকরিয়া কার্যালয়ে চূড়ান্ত শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে জমির কাগজপত্রসহও সম্যক বিষয় অবগত হয়ে রিভিউ মিচ মামলায় আপত্তিকারী শাহ আলমের স্বত্ব প্রমাণিত না হওয়ায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) মামলাটি নথিজাত করার চূড়ান্ত আদেশ দেন। এতেও শাহ আলমরা ক্ষিপ্ত হয়ে তপশীলোক্ত জায়গা জোর পূর্বক জবর দখল করার অপচেষ্টা শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৭-৮ নারী ও শিশুকে সামনে নিয়ে শাহ আলমরা হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের জায়গায় স্থিত দোকান ভাংচুর করেন। শুধু তায় নয়, এ সময় শাহ আলমরা দোকানের মালামাল, ভাড়াটিয়ার ছাগল, দরজার পাট্টা সহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল প্রকাশ্যে নিয়ে যায়। লুটপাটের ঘটনায় কোথাও অভিযোগ করলে শাহ আলমরা প্রাণে হত্যা সহ নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদক মামলায় ফাসিয়ে দিবে বলেও হুমকি দেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক হাফেজ মো. খলিলুর রহমান।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে বেড়াসহ ভিতরের মালামালও নেই। যেন উপরে ফিটফাট ভিতরে সদর ঘাট। এ সময় কথা হয় অভিযুক্ত হাজেরা বেগম’র সাথে। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, জায়গা আমাদের, কাগজপত্র আছে। আমরা কারো দোকান ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। তবে হাফেজ মো. খলিলুুর রহমান যাতে দোকানে কাজ করতে না পারেন, সেজন্য দোকানের দরজার কাঠগুলো অন্যত্র সরিয়ে রেখেছি। এদিকে দোকানে ভাড়াটিয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত দশ বছর আগে আমি হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের কাছ থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। গত ১৪ আগস্ট শাহ আলমরা দোকান তাদের দাবী করে দোকানের মালামালসহ দারজার কাঠগুলো নিয়ে গেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার নুর মোহাম্মদ সহ স্থানীয় আব্দুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইমনসহ অনেকে জানান, জায়গাসহ দোকান ঘরটি হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের। অনেক বছর ধরে খলিলুর রহমান ওই জায়গার কিছু অংশে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে ভোগ করে আসছেন। আর কিছু অংশে চাষাবাদ করেন। সম্প্রতি শাহ আলমরা ওই দোকানসহ জায়গা তাদের দাবী করে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। যা দু:খ জনক। শাহ আলমরা সামাজিক কোন সিদ্ধান্তও মানেন না। কথায় কথায় মানুষকে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন শাহ আলমরা।
এ বিষয়ে বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন জানায়, হাফেজ মো. খলিলুর রহমানের দোকান ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষককে আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে চকরিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বমুবিলছড়িতে দোকান ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় হাফেজ মো. খলিলুর রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সরেজমিন তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।