মাদক আসক্তি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে। এটি পরিবারে মানসিক ও অর্থনৈতিক সংকট, শিক্ষা ও কর্মজীবনে ব্যাঘাত, এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে।সাম্প্রতিক সরকারি জরিপে দেশের ৮.৩ মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.৯% ।এর মধ্যে ৬.১ মিলিয়ন গাঁজা (ক্যানাবিস) ব্যবহার করে, ২.৩ মিলিয়ন ইয়াবা, ৩৪৬ হাজার ফেনসিডিল, ৩২০ হাজার হেরোইন, অন্য বিভিন্ন পদার্থ মিলিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১১.৭ মিলিয়নের মতো (বহু ব্যক্তি একাধিক পদার্থ সেবন করে)।১৫–৩০ বছর বয়সী যুবকরা ৮০‑৯০% মাদকাসক্ত, যাঁদের মধ্যে অনেকই শিক্ষার্থী বা তরুণ কর্মহীন ।মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও চিকিৎসা অবদান দেশব্যাপী ৩৮০–৩৮৭টি প্রাইভেট রিহ্যাব কেন্দ্র, এবং মাত্র ৪টি সরকারি কেন্দ্র (ঢাকায় প্রধান এবং তিন বিভাগীয় শহরে ছোট কেন্দ্র) রয়েছে, সামগ্রিক বেড সংখ্যা প্রায় ২০০।যদিও কিছু কেন্দ্রের মান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তবুও অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো সেবাই প্রদান করছে।
ইতিবাচক উদ্যোগ ও সফলতা
গভর্ণমেন্ট ও প্রাইভেট উভয় কেন্দ্রেই পরামর্শ সেবা চালু, ২০২২‑২৩ অর্থবছরে প্রাইভেট সেক্টরে ১৫,৯১৫ জন এবং সরকারি কেন্দ্রে ৯,৪৮৭ জন সেবা পেয়েছেন ।DNC (ডিপার্টমেন্ট অফ নারকোটিক্স কন্ট্রোল) গৃহীত প্রতিরোধমূলক প্রচারণা যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ, কোড চেকপোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা, মিডিয়া বিজ্ঞাপন ইত্যাদি কার্যক্রমে ১৯,৮৪৪ জন গৃহীত এবং ১৮,১৫১ জন প্রাইভেট কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা পেয়েছেন ।
নতুন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ বিছানাসম্পন্ন ৭টি সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে আধুনিক চিকিৎসা, পরামর্শ, ভোকেশনাল ট্রেনিং (কোর্স, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ), ধর্মীয় ও মানসিক সহায়তা, এম্বুলেন্স ও সবকিছুDNC তৈরি করছে জাতীয় গাইডলাইন (‘National Guidelines for the Management of Substance Use Disorders’), যাতে সারা দেশে রোগীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মান নিশ্চিত করা যায় ।৮.৩ মিলিয়ন মাদকাসক্ত বাংলাদেশে, কিন্তু দেশের তরুণদের জীবনে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।সরকার প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, মান উন্নয়ন ও সচেতনতা— সব স্তরে কাজ করছে।
৭টি নতুন সরকারি কেন্দ্র এবং বর্ধিত পরামর্শ সেবা প্রোগ্রাম দেশজুড়ে সহায়তা ও আশা সৃষ্টির পথ খুলছে।যুবকদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করে সমাজে পারস্পরিক পুনরাবির্ভাবকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিষয়বর্তমান বিবরণইতিবাচক দিকমাদকাসক্ত সংখ্যাপ্রায় ৮.৩ মিলিয়ন (৪.৯%)বড় নিশ্চিততা ও পরিকল্পনাচিকিৎসা কেন্দ্রমাত্র ৪ সরকারি ৩৮০ প্রাইভেট নতুন ৭ সরকারি কেন্দ্রপরামর্শ সেবাসরকারি ও প্রাইভেট মিলিয়ে বহু মানুষ সেবা পেলেনআয়ত্ত রূপে উন্নয়নপ্রশিক্ষণ ও সচেতনতা DNC এর চেষ্টার অংশশিক্ষাপুষ্টি, মিডিয়া প্রচারণা, কমিউনিটি জাগরণজাতীয় মান গাইডলাইন প্রস্তুত হচ্ছে সারাদেশে সমতা নিশ্চিত করবে।পরিবার ও ভালোবাসার ভূমিকা: মাদকমুক্ত জীবনের আশ্বাসমাদকাসক্তি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়—এটি পুরো পরিবার ও সমাজকে স্পর্শ করে। তবে সুখবর হলো, এই রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব, যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সহানুভূতির সহায়তা পাওয়া যায়।পরিবারের সদস্যদের উচিত, আসক্ত ব্যক্তিকে অপমান বা অবহেলা না করে ভালোবাসা ও সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক ও শারীরিক অবস্থা। সময়মতো তাকে একটি স্বীকৃত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো গেলে সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পরামর্শদাতা ও থেরাপিস্টদের সহায়তায় অনেক তরুণ-তরুণী, বাবা-মা কিংবা সহকর্মী আজ সুস্থ হয়ে নতুন করে জীবন গড়ছেন। শুধু প্রয়োজন – ধৈর্য, ভালোবাসা, ও সঠিক চিকিৎসার সমন্বয়।তাই, মাদকাসক্ত কোনো প্রিয়জন থাকলে তাকে একা ফেলে দেবেন না। পাশে দাঁড়ান, সাহস দিন, এবং তাকে নিয়ে যান চিকিৎসার পথে। মনে রাখবেন, ভালোবাসা ও সঠিক সহায়তায় সুস্থ জীবন সম্ভব—আর সেটাই আমাদের দায়িত্ব, একে অপরের প্রতি।