সংবাদ দাতা
বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে থানওয়াই মুরুং তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় এখন দিশেহারা।
অভিযোগ রয়েছে, চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা, আলীকদম উপজেলায় কাঠ ব্যবসার সুবাদে দীর্ঘদিন অত্র উপজেলায় অবস্থান করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাছান আল শাফি শিবলীর মুরুং ও অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়কে নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত লেকে একটি ঘর তৈরীর কাঠ সাপ্লাইয়ের মধ্য দিয়ে পরিচয় ঘটে একসময় কাঠ ব্যবসায়ী বাহাদুর উক্ত লেক দেখাশোনার দায়িত্ব পান।
চকরিয়ার উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে পূর্ব পরিচিত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও চকরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফজল করিম সাঈদী বাহাদুরের মাধ্যমে ২০২২ থেকে মাঝে মধ্যে লেকে যাতায়াত শুরু করেন, একপর্যায়ে ফজল করিম সাঈদী সুকৌশলে লেকে হাঁস-মুরগী, গরুর খামার স্থাপন ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে।চকরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফজল করিম সাঈদীর কাছের লোক আলীকদম সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নাগরিক উলা মিয়া তার সাথে নিয়মিত লেকে যাওয়া আসা এবং খামারের সবকিছু দেখাশোনা করে।
ম্রো সম্প্রদায়ের জমি অবৈধ দখল চক্রান্তের অংশ হিসেবে গত ১০/১২/২০২৪ইং তারিখে উলা মিয়া কর্তৃক তরু চন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে অশ্ব মনি ত্রিপুরা'র কাছ থেকে কিনে নিয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয়ে উলা মিয়ার নামে নামজারী করার আবেদন করে,তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এসিল্যান্ড রুপায়ন দেব তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে উপজেলা কানুনগো কে দায়িত্ব দেন। গত ১৭ মার্চ ২০২৫ইং তারিখে উপজেলা কানুনগো তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন, তাতে উল্লেখ রয়েছে নামজারী আবেদনকারী অশ্বমনি ত্রিপুরা এবং ক্রেতা উলা মিয়া উভয়ের কেউই উক্ত জায়গার দখলে না থাকায় নামজারী পিটিশন বাতিল পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ২০০৫ সালে ২৬ আগষ্ট উক্ত মৌজার তৎকালীন হেডম্যান ঞোমং মার্মার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর লেখাএকটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় উক্ত জায়গা সম্পূর্ণ খাস এবং দীর্ঘদিন ধরে থনওয়াই মুরুং এর পিতা লাংরত কারবারি আবাদ পূর্বক ভোগদখল করে আসছে। তবে ১৯৮১ সাল থেকে থনওয়াই মুরুং এর পরিবার উক্ত জমির খাজনা প্রদান করে আসছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১শত বছর পূর্বে উক্ত মুরুং পাড়াটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ১২জুন রাতে কে বা কারা লেকের একটি ঘরে ভাংচুর করে ১৭ জুন ২০২৫ইং তারিখে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুরন মুরুং,বাহাদুরসহ ৫ জনের নামে নালিশী দরখাস্ত করেন, এর পরিপেক্ষিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হোসাইন আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য আলীকদম থানা অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
হামলার বিষয়ে অভিযুক্তরা বলেন, কে বা কারা এই ভাংচুর করেছে আমরা জানিনা, উল্লেখিত হামলার সময়ে আমরা কেউই ঘটনাস্থলের আশেপাশেও ছিলাম না।
অভিযুক্ত দুরন ম্রো মাস্টার বলেন,অভিযোগকারীরা আমাদের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের উদ্দেশ্যে নিজেরাই ভাংচুর করে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে। প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করলে তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত চক্রান্তের তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমাদের সম্পত্তিতে আমরা কেন ক্ষতিসাধন করবো।
মোঃ বাহাদুর বলেন, আমার মাধ্যমেই ফজল করিম সাঈদী এই লেকে এসেছে, বিভিন্ন ভাবে সে এখানে যাতায়াত পরবর্তী কিছুদিন পূর্বে আমাকে জানায় সে একটি জায়গার কাগজ কিনেছে, এবং লেকের জায়গাটিই ওই কাগজের জায়গা বলে স্বাক্ষী দিতে আমাকে চাপ দেয়, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকেসহ থনওয়াই মুরুং এর পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাবে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। ফজল করিম সাঈদী এবং উলা মিয়া রাস্তার পাগল হত্যা করে হলেও তাদের ফাঁসাবে বলে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী থনওয়াই মুরুং ও বাহাদুর।
থনওয়াই মুরুং আরো জানান, হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে বলেন, "এই জমি এখন আমাদের, চলে যাও না হলে পরিণতি ভালো হবে না।"এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টো থনয় মুরুং ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেই সাজানো মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি শুরু হয় বলে অভিযোগ।
তিনি বলেন, “আমি এখন নিজের জায়গায় দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছি। কারণ অভিযুক্তদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া।”
স্থানীয়রা সাবেক মহিলা মেম্বার খাইডেন ম্রো,লেংরু ম্রো,সুকুমার ত্রিপুরা,মোঃ শাহ আলম,মোঃ ফয়েজ,জানান, রোহিঙ্গা নাগরিক উলা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে চৈক্ষ্যং এলাকায় থেকে বিভিন্ন ভাবে পাহাড়ি ও প্রান্তিক জনগণের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। চক্রটির সঙ্গে যুক্ত থেকে সাবেক চেয়ারম্যান ফজল করিম সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে এসব অপকর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।এ ধরনের ঘটনায় আদিবাসী ও সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগণের নিরাপত্তা ও ভূমি-অধিকার মারাত্মক ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক এক জনপ্রতিনিধি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন “এই ঘটনার পেছনে বড় মাপের একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, যাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। ভুয়া কাগজ দিয়ে মূল মালিকদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে আলীকদম থানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, “তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসী জানান, রোহিঙ্গা নাগরিক উলা মিয়া বহু চেষ্টার পরেও আলীকদম উপজেলায় ভোটার হতে না পেরে চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে তথ্য গোপন করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভোটার হয়। পরবর্তীতে আলীকদম উপজেলায় স্থানান্তরিত হয়। জেনেশুনে আলীকদম উপজেলায় স্থানান্তরিত হতে যে সকল জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এবিষয়ে উলা মিয়া বলেন, আমি ৮বছর ধরে এই জায়গার দখলে আছি এবং ২০২৪ সালে জায়গা আমার নামে নামজারী করতে আবেদন করেছি, অচিরেই নামজারী হয়ে যাবে। ৮বছর আগে দখলে থেকেও এতো বছর নামজারী করা হয়নি কেনো জানতে চাইলে উলা মিয়া এর সদুত্তর দিতে পারেননি।