মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
বান্দরবানের লামা উপজেলায় লামা সাংবাদিক ফোরামের সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম বাবলু নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। সোমবার (০৯ জুন ২০২৫) দুপুর ২টার দিকে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মধ্যম হায়দারনাশী এলাকায় তার বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়, কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে, যা এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হামলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, ফরিদুল আলম বাবলু তার সেমি পাকা বসতবাড়িতে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার সময় অভিযুক্তরা অতর্কিতভাবে প্রবেশ করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তি করে তিনি তাদের হাত থেকে ছুটে গিয়ে তার পুরাতন বাড়িতে আশ্রয় নেন। তার চিৎকার শুনে মা ও স্ত্রী তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়।
হামলাকারীরা ফরিদুল আলম বাবলুর সেমি পাকা ঘরের এক অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে আনুমানিক ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার ক্ষতি সাধন করে। অভিযুক্ত ৫নং আসামী স্কুল ক্যান্টিনে প্রবেশ করে দোকানের ক্যাশ ভেঙে ৫৬,০০০/- (ছাপান্ন হাজার) টাকা লুট করে। ফরিদুল আলমের মা বাধা দিলে ১নং আসামী তার গলায় থাকা আট আনা ওজনের ৬০,০০০/- (ষাট হাজার) টাকার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। স্ত্রীকে উদ্ধার করতে এলে ৪নং আসামী তার গলায় থাকা চার আনা ওজনের ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
ফরিদুল আলমের বোন ৯৯৯ নম্বরে কল করা অবস্থায় আসামীরা ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আসামীরা ফরিদুল আলমকে ধাওয়া করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফেসবুকে লাইভ করা অবস্থায় ফরিদুল আলম পুরাতন ঘরে প্রাণ বাঁচাতে ঢুকে পড়লে আসামীরা দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তার গলায় অস্ত্র ঠেকায়। তিনি হাত দিয়ে প্রতিহত করে অন্য রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রাণে রক্ষা পান।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদুল আলম বাবলুর বসতভিটা দখলের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর জের ধরেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ফরিদুল আলমের পিতা শামসুল আলমের নামে ২৮৬নং ফাঁসিয়াখালী মৌজার আর/১৩৭১নং হোল্ডিং এর আন্দর ২.০০ (দুই) একর জমি রয়েছে, যা ১৯৭৯-৮০ সাল থেকে তারা ভোগ দখল করে আসছেন। ২০১৮ সালে ফরিদুল আলমের পিতা এলাকার কোমলমতি শিশু কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হায়দারনাশী গ্রামার স্কুল স্থাপন করার জন্য উক্ত জমির কিছু অংশ দান করেন।
২০০৮ সাল থেকে অভিযুক্তরা উক্ত জমি জবর দখল করার উদ্দেশ্যে ফরিদুল আলমের পরিবারের সাথে বিরোধ চালিয়ে আসছে। সেসময় তারা ফরিদুল আলমের পিতা ও মাতাকে গুরুতর আঘাত করে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে লামা থানায় জিআর- ১০৬/২০১০ মামলা দায়ের করা হয়, যা আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছিল।সম্প্রতি, ১৭/০৪/২০২৫ তারিখে আসামীরা ফরিদুল আলমের পিতার নামীয় আর/১৩৭১নং হোল্ডিং এর জায়গা অন্য জায়গার দলিল দেখিয়ে পুনরায় জবর দখল করার চেষ্টা করে। অভিযুক্তরা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা জায়গা জবর দখল করার পাঁয়তারা করছে। ফরিদুল আলমের পিতা স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বৈঠকে বসতে রাজি হলে আসামীরা জোরপূর্বক অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে। স্বাক্ষর না দিলে তারা হুমকি দেয়। এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে ফরিদুল আলম বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, লামা চৌকি আদালত, বান্দরবানে সি.আর মামলা নং- ১৪২/২০২৫খ্রিঃ দায়ের করেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। উক্ত মামলা তুলে নেওয়ার জন্যই আসামীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
হামলার শিকার হওয়ার পর ফরিদুল আলম বাবলুর বোন ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে কুমারি পুলিশ ফাঁড়ির আইসিসহ একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে ফরিদুল আলম বাবলু ও তার পরিবারকে উদ্ধার করে। এ বিষয়ে ফরিদুল আলম বাবলু থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে ১০ জন নামীয় আসামী এবং অজ্ঞাতনামা ১২/১৪ জন অস্ত্রধারী আসামীকে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামীরা হলেন: ১। মোঃ হারুন (৪৪), ২। কুতুব উদ্দিন প্রকাশ গুরা সোনাইয়া (২৪), ৩। জয়নাল আবেদীন মিন্টু (৩০), ৪। মোঃ মামুন (৪৬), ৫। নজরুল ইসলাম (৪৪), ৬। মোঃ বাপ্পি (১৮), ৭। মিরাজুল শিহাব মোঃ ওয়াহেদ (৩৪), ৮। মিনুয়ারা বেগম (৩২), ৯। আরফা বেগম (৩৬), ১০। মিশু (২৬)।
এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় লামা সাংবাদিক ফোরাম তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে। একইসাথে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। লামা থানার এনামুল হক ভুইয়া পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বলেছেন, মামলা চলমান এবং পুলিশ ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে।