নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তিন অর্থ বছরে আদায়কৃত সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হদিস মিলছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শয্যা ও কেবিন ভাড়া, এম্বুলেন্স ভাড়া এবং চিকিৎসা সেবার ইউজার ফি বাবদ এ অর্থ আদায় হলেও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েনি। হাসপাতালের ক্যাশিয়ার মো. আজিজুল হক সেলিম এই অর্থ গ্রহণ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা জমা দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।আদায় হয়েছে, জমা হয়নি : হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (৩১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত) ইউজার ফি বাবদ আয় হয়েছে ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৪৮০ টাকা। যা আদায় করেছেন ক্যাশিয়ার আজিজুল হক সেলিম। অথচ ব্যাংকে জমা পড়েছে মাত্র ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৫ টাকা। বাকি ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৭৫ টাকার কোন হদিস নেই। এর আগের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৫ টাকা আয় হলেও জমা হয় ৮৫ লাখ ২২ হাজার ৫৯০ টাকা। একইভাবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আদায়কৃত অর্থের ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা জমা হয়নি। যার সবগুলো অর্থ আদায় করেন ক্যাশিয়ার নিজেই। তিন অর্থবছর মিলিয়ে জমা না পড়া অর্থের পরিমাণ ৫৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ টাকা।
তদন্ত শুরু, জবাব নেই ক্যাশিয়ারের : আদায়কৃত ইউজার ফি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেয়ার বিষয়ে ক্যাশিয়ার আজিজুল হক সেলিমকে একাধিকবার চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার জবাব দেননি তিনি। কিংবা অর্থ জমা দেয়ার বিষয়ে প্রমাণিক দাখিল করেননি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মান্নান জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউজার ফি’র আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে।
তিনি বলেন, ক্যাশিয়ার আজিজুল হক সেলিমের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে বিষয়টি তদন্তে দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটিও অর্থ জমা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. কমরুল আযাদের নেতৃত্বে কমিটি অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মাঝে-মধ্যে জমা হয়নি, তবে দেব! : অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাশিয়ার মো. আজিজুল হক সেলিম বলেন, সব টাকা জমা দেইনি বিষয়টি এমন নয়। মাঝে মাঝে কিছু টাকা জমা হয়নি। তবে টাকাগুলো জমা দেব। কিছুদিন আগেও বকেয়া টাকা জমা দিয়েছি। তদন্ত কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি।
পুরনো অডিট আপত্তি, ব্যবস্থা নেই : জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেও ক্যাশিয়ারের অর্থ জমা না দেওয়ার বিষয়টি অডিট আপত্তিতে ওঠে। এরপরও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তৎকালীন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ক্যাশিয়ারের পক্ষে ‘সাফাই’ গেয়ে অডিট নিষ্পত্তির অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি জমা না হওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের ব্যবস্থার কথাও জানান সেই সময়ে। কিন্তু এরপরও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। বরং ক্যাশিয়ার আজিজুল হক সেলিম একইভাবে অর্থ আদায় ও সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন